পুরনো দিনের অদ্ভুত কিছু পেশা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় মানুষের আচার-আচরণ, সামাজিক প্রথা, খাদ্যাভাস ইত্যাদি সবই। জীবিকার্জনের পন্থাও এর ব্যতিক্রম নয়। আগেকার দিনে মানুষ যেসব কাজ করে অর্থোপার্জন করে পেট চালাতেন, তার অনেকগুলোই আজকের দিনে অদ্ভুত লাগবে যে কারো কাছেই। কোনো কোনোটি পড়ে যেমন বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে যেতে পারে, তেমনি কোনোটি সম্পর্কে জানার পর হাসিও উঠতে পারে বিস্তর। পুরনো দিনের পৃথিবীর অদ্ভুত কিছু পেশার কথা তুলে ধরা হলো-

নকার-আপ
ঘুম থেকে সময়মতো ওঠার জন্য অনেকেই মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম ব্যবহার করেন। এককালে এ জায়গায় ছিল অ্যালার্ম ঘড়ি। কিন্তু এ অ্যালার্ম ঘড়ি আসার আগে মানুষ তাহলে সময়মতো ঘুম থেকে ওঠার জন্য কী করতেন!
তখন অদ্ভুত এক পেশা ছিল, যার নাম ‘নকার-আপ’ কিংবা ‘নকার-আপার’। নারী-পুরুষ উভয়েই এ পদ্ধতিতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যে ব্যক্তির বাড়িতে যেদিন তাদের ডিউটি, সেদিন সেই বাড়িতে গিয়ে তার বেডরুমের জানালায় বড় লাঠি দিয়ে আঘাত করতেন একজন নকার-আপার। গ্রাহক ঘুম থেকে উঠেছে নিশ্চিত করেই তিনি পরের গ্রাহকের দিকে ছুটতেন।

লিঙ্ক বয়
রাতের বেলায় ঘর থেকে বের হলেই রাস্তায় জ্বলা বিদ্যুৎবাতি আমাদের পথ আলোকিত করে দেয়। আর কোনো কারণে লোডশেডিং হলে টর্চ কিংবা স্মার্টফোনের টর্চলাইটের অপশন তো আছেই। তবে বিদ্যুতের এমন সহজলভ্যতার আগের জীবন কিন্তু অতটা সহজ ছিল না। তখন রাতের বেলায় পথ চলতে গেলে অন্ধকার দূর করতো কম বয়সী ছেলেরা, যাদের বলা হতো ‘লিঙ্ক বয়’। হাতে একটি মশাল ধরে তারা পথচারীদের পথকে আলোকিত করে তুলতো। এজন্য জুটতো সামান্য কিছু অর্থ। রাস্তায় বিদ্যুৎবাতি আসার আগে ইংল্যান্ডে এ লিঙ্ক বয়দের দেখা মিলতো।

পিম্প মেকার
একসময় লন্ডন ও এর আশেপাশের এলাকায় পিম্প মেকার নামের এ পেশাটির চল ছিল। পিম্প (Pimp) একটি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ বেশ্যালয়ের দালাল। সে কারণে প্রথমে যে কেউ ‘পিম্প মেকার’ দেখে ভাবতে পারেন, অতীতে হয়ত ট্রেনিং দিয়ে পিম্পদের প্রস্তুত করা হতো! আসল ঘটনা এর ধারেকাছেও নেই। লন্ডন এবং তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যবহৃত এক আঞ্চলিক শব্দ ছিল পিম্প, যার অর্থ তাদের কাছে ছিল জ্বালানি কাঠের স্তূপ। যে ব্যক্তি বিক্রির জন্য কাঠ সংগ্রহ করতেন, তাকেই তারা পিম্প মেকার বলতেন।

টোশার
টোশারদের তুলনা করা যায় আমাদের দেশের টোকাইদের। তবে টোকাইদের দেখা মেলে ডাস্টবিনগুলোর আশেপাশে। আর টোশারদের দেখা মিলতো লন্ডনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাছাকাছি জায়গায়। সব জায়গা থেকে আসা ময়লায় তারা অক্ষত কিন্তু দরকারি জিনিস খুঁজে বেড়াতো। তারপর কিছু পেলে সেটা পরিষ্কার করে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা।

গং-ফার্মার
আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মানববর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। সে কারণে প্রাকৃতিক কর্মাদি সেরে টয়লেটের ফ্ল্যাশ ব্যবহার করলেই হয়ে যায়। আর সেপটিক ট্যাঙ্কে জমা হওয়া ময়লার জন্যও আছে বিশেষ ট্র্যাক যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই ময়লাগুলো বের করে আনতে পারে মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই। তবে আগেকার দিনে এ কাজের জন্য যখন যন্ত্র ছিল না, তখন কিন্তু মানুষই ছিল একমাত্র ভরসা। টয়লেটের যাবতীয় আবর্জনা খালি হাতেই পরিষ্কার করা এ মানুষগুলো ‘গং-ফার্মার’ বা ‘নাইট সয়েলম্যান’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাতের বেলায় মূলত তারা কাজ সারতেন বলেই তাদের নাইট সয়েল ম্যান বলা হতো। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতেন বলে তাদের অনেকেই মারা যেতেন শ্বাসরোধ হয়ে।

জিমনারসিয়াখ
জিমনেশিয়াম বলতে আমরা চিনি ব্যায়ামাগারকে। আর এ জিমনেশিয়ামের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে জিমনারসিয়াখের। প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল এ পেশাটি। রেসলিং, ব্যায়ামাগারে ব্যায়াম সারা কিংবা অন্যান্য খেলাধুলার পর একজন অ্যাথলেটের গায়ে লেগে থাকা ঘাম পরিষ্কার করা, তার শরীর মুছে দেওয়া এবং তেল মাখিয়ে দেওয়াই ছিল এ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তির প্রধান কাজ। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত আর গা ঘিনঘিনে হলেও তখনকার গ্রিসে কিন্তু পেশাটিকে বেশ সম্মানের চোখেই দেখা হতো। আবেদনকারীর বয়স হওয়া লাগতো ৩০-৬০ এর ভেতর। একই সঙ্গে সম্ভ্রান্ত বংশীয় হওয়াও ছিল পেশাটিতে ঢুকতে পারার পূর্বশর্ত।

শেষকৃত্যানুষ্ঠানের ভাড়
একজন মানুষের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শোকের চাদরে মোড়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রাচীন রোম যেন এ স্বাভাবিক নিয়মটিও মানতে চায়নি। তাই কারো শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও তারা নিয়োগ দিতো বিভিন্ন ভাড়কে। তারা রঙ-বেরঙয়ের পোশাক পরে এসে করতো নানা মজাদার অঙ্গভঙ্গি, অনুকরণের চেষ্টা করতো মৃতের নানা কথাবার্তা-চালচলন। এসবের উদ্দেশ্য ছিল মৃতের আত্মাকে শান্তি দেওয়া এবং জীবিত শোকার্ত আত্মীয় ও কাছের মানুষদেরকে মানসিকভাবে চাঙা করে তোলা। এসব করে তাদের অর্থোপার্জনও বেশ ভালোই হতো।

ফুলার
ফুলিং বলতে বোঝায় কাপড় পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াকে। প্রাচীন রোমে এ কাজটি করতো ক্রীতদাসেরা। এজন্য গোড়ালি সমান মূত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে কাপড় ধোয়া লাগতো তাদের! কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। তখনকার দিনে তো আর এখনকার মতো কাপড় ধোয়ার জন্য এত সাবান কিংবা গুঁড়া সাবানের প্রচলন ছিল না। মূত্রে থাকা অ্যামোনিয়াম লবণ পরিষ্কারক ক্ষমতাসম্পন্ন। এজন্যই মূলত মূত্রের দ্বারস্থ হয়েছিল রোমের মানুষেরা। সেই মূত্রের মাঝে মূলত মানুষের মূত্রই থাকতো।

গ্রুম অব স্টুল
আজ প্রাচীন পৃথিবীর যেসব অদ্ভুত পেশার কথা আলোচনা করা হলো, তার মাঝে সবচেয়ে অদ্ভুত সম্ভবত এটিই। একজন ইংরেজ রাজার সভাসদদের মাঝে তার সবচেয়ে কাছের লোক থাকতেন এ গ্রুম অব স্টুল। তার কাজ ছিল রাজার হাত-পা ধুইয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে প্রকৃতির বড় ডাকে সাড়া দেওয়ার পর তার পশ্চাৎদ্দেশ পরিষ্কার করে দেওয়া! শারীরিকভাবে রাজার এত কাছে আসার কারণেই রাজা তাকে এতটা বিশ্বাস করতেন। রাজ্যের নানা গোপনীয় কথাবার্তাও শেয়ার করতেন তার সঙ্গে। বর্তমান দুনিয়ায় কাজটি যতই অদ্ভুত এবং অপমানজক মনে হোক না কেন, তখনকার দিনে কিন্তু একজন গ্রুম অব স্টুলকে বেশ সম্মানের চোখে দেখা হতো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর